রোনালদো ফেনোমেননঃ টেল অব দ্যা গ্রেটেস্ট নাম্বার নাইন
১.
আচ্ছা আপনাকে যদি কেউ প্রশ্ন করে,ক্লাব ফুটবলের সবচাইতে বড় দ্বৈরথ কোনটি? জবাব নিঃসন্দেহে রিয়াল বনাম বার্সেলোনা এল ক্লাসিকো! প্রশ্নকর্তা যদি আপনাকে আবার প্রশ্ন করে এমন কয়েকজন ফুটবলারের নাম বলার জন্য যারা রিয়াল মাদ্রিদ এবং বার্সেলোনা উভয় দলের হয়েই এল ক্লাসিকো মাতিয়েছেন এবং উভয় দলের হয়েই গোল উৎসব করেছেন। আপনি কয়েকজনের নাম বলতে পারবেন। কিন্তু প্রশ্নটাকে আরেকটু কঠিন করে তিনি যদি আপনাকে এভাবে প্রশ্ন করেন,শুধুই এল ক্লাসিকোয়ই না ইতালির সবচাইতে বড় দ্বৈরথ মিলান ডার্বিতে এসি মিলান ও ইন্টার মিলান দুই দলের হয়েই গোল করেছেন এমন কোন ফুটবলার আছে? তখন জবাবটা কিন্তু এত সহজ হবে না। কারণ উত্তর কিন্তু শুধুই একজন আছে; তিনি রোনালদো লুইস নাজারিও দ্যা লিমা!
প্রায় ১৭টি বছর প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগকে বোকা বানিয়ে একের পর এক গোল করে নিজেকে নিয়ে গেছেন ফুটবলের এক অনন্য উচ্চতায়। ২টি বিশ্বকাপ,২টি কোপা আমেরিকা,২বার ব্যালন ডি’অর,৩ বার ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরষ্কার পাওয়া রোনালদো নিজের ক্যারিয়ারে একমাত্র চ্যাম্পিয়নস লীগ ছাড়া সম্ভব্য সবই জিতেছেন।
বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসি। মেসিকে একবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তাঁর চোখে সর্বকালের সেরা স্ট্রাইকার কে? কোনো চিন্তা না করেই বলে দেন “রোনালদো নাজারিও”। সাথে আরো বলেন, “আমি তাঁর বিপক্ষে খেলতে পেরে ভাগ্যবান, আরো ভাগ্যবান এই জন্য যে আমি যখন খেলেছি তখন তিনি ইঞ্জুরির কারণে তাঁর সেরা ফর্মে নেই। শুধু সেরা নাম্বার নাইন না, সর্বকালের সেরা তালিকায়ও উনি সামনের দিকেই থাকবেন।”
২.
১৮ই সেপ্টেম্বর ১৯৭৬সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরিওর এক হত দরিদ্র দম্পতি বাবা নেলিও নাজারিও দি লিমা ও মা সোনিয়া দোস সান্তোস বারাতার ঘর আলো করে আসেন ফুটফুটে রোনালদো।
তার পরিবার এত দরিদ্র ছিল যে,জন্মের পর সন্তানের নাম রেজিষ্ট্রেশন করতে রোনালদোর বাবা মায়ের দুইদিন অপেক্ষা করতে হয়। রোনালদোর বয়স যখন মাত্র ১১ বছর,পরিবারের দারিদ্রতা যখন চরম শিখরে,জীবনের সবচাইতে বড় অপ্রত্যাশিত ঘটনাটি ঘটে তার বাবা মায়ের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়! টাকা পয়সার অভাবে খুব বেশি পড়াশোনাও করতে পারেনি!দু-মুঠো খাবারের তাগিদে রোনালদো স্কুল ছেড়ে বেরিয়ে নেমে পড়েন জীবন সংগ্রামে। ছোট্ট বয়সেই অর্থ উপার্জনের জন্য বেচে নেন রাস্তা ফুটবলের প্রতিযোগিতা চালানো। বেচে থাকার তাগিদে ফুটবলের মধ্যেই ভালোবাসা খুজে পান। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানেই রোনালদো হয়ে যান স্থানীয় ক্লাবগুলোর নিয়মিত সদস্য!
এসময় স্থানীয় ক্লাব সাও ক্রিস্তোভাও -এ খেলার সময় ব্রাজিলের ঘরোয়া লীগের বিখ্যাত ক্রুইজেরোর নজরে আসেন। জীবনের গতিপথ পালটে যায় এখানেই।
৩.
২৫শে মে,১৯৯৩ সালে মাত্র ১৬ বছর ৩মাস ২০৩দিন বয়সে ‘মিনাস গেরিয়াস চ্যাম্পিয়ন্সশীপে’ ক্যালডেন্সের সাথে প্রফেশনাল ক্যারিয়ারে রোনালদোর ডেব্যু হয়।রোনালদো প্রথম নজরে আসেন ৭ই নভেম্বর ১৯৯৩ সালে ব্রাজিলিয়ান ক্লাব বাহিয়ার বিপক্ষে এক ম্যাচে একাই ৫ গোল করে! ম্যাচটি দেখে ব্রাজিলিয়ান লিজেন্ডারি ডিফেন্ডার কাফু বলেন,
“রোনালদোকে প্রথম দেখি ক্রুইজেরোর হয়ে খেলতে।সে তখনও অনেক ছোট ছিল!খেলায় সে একাই পাচ গোল করে এবং সে এটাই দেখায় যে,সে সত্যিকার ফেনোমেনন”
ক্রইজেরোর হয়ে প্রথম মৌসুমেই জিতে নেন ক্লাব ইতিহাসে প্রথম ব্রাজিলের ঘরোয়া টুর্নামেন্ট কোপা ডে ব্রাজিল। কোপা ডে ব্রাজিল ক্রুইজেরোর হয়ে ১৪ ম্যাচ খেলে করেন সর্বোচ্চ ১২ গোল। ক্রুইজেরোর হয়ে রোনালদো ৪৭ ম্যাচে করেন ৪৪ গোল।১৯৯৪ সালে ব্রাজিলিয়ান লিজেন্ডারি ফুটবলার রোমারিওর পরামর্শে ক্রুইজেরোর পাঠ চুকে ইউরোপে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলেন! এবং ১৯৯৪-৯৬ সাল এই দুই বছর নেদারল্যান্ডসের ক্লাব পিএসভি আইগুহোভেনের হয়ে খেলেন।প্রথম মৌসুমেই ডাচ লীগে পিএসভির হয়ে করেন ৩০ গোল। পিএসভির হয়ে ১৯৯৫ সালে এরিডিভিসের সর্বোচ্চ গোলদাতা হোন এবং ১৯৯৬ সালে জিতে নেন ডাচ কাপ। ১৯৯৪-৯৫ উয়েফা কাপে বায়ার লেভারকুসেনের সাথে অবিস্মরণীয় হ্যাট্রিক করার পর রোনালদো সম্পর্কে রুডলফ বুলার বলেন,
“আমি কখনওই ১৮ বছর বয়সী কাউকে এভাবে খেলতে দেখিনাই”
পিএসভির হয়ে ৫৮ ম্যাচে করেন ৫৪ গোল!মাত্র ২০বছর বয়সে জিতে নিন সবচাইতে কম বয়সে ফিফা বর্ষসেরার পুরষ্কার।
পিএসভির হয়ে নজরকাড়া পারফরম্যান্সের পর ইউরোপে ইন্টার ও বার্সেলোনার মত বড় বড় ক্লাবগুলো ট্রান্সফার যুদ্ধে নামে রোনালদোকে দলে বেড়াতে।অবশেষ ততকালীন রেকর্ড ১৭ মিলিয়নে পিএসভি থেকে বার্সেলোনায় যোগ দেন রোনালদো। বার্সেলোনায় যোগ দিয়ে প্রথম মৌসুমেই যা করলেন তা ছিল অবিশ্বাস্য!
৪.
বার্সেলোনা প্রথম সিজনেই করেন ৪৯ ম্যাচে ৪৭ গোল।তার মধ্যে কেবল লীগেই করেন সর্বোচ্চ ২৫ গোল।বার্সার হয়ে জিতেন উয়েফা কাপ,কোপা ডেল রে,সুপার কোপা ডি ইস্পানা।
১১ অক্টোবর ১৯৯৬ সাল, এসডি কম্পোস্টেলার সাথে ঐতিহাসিক গোলটির পর স্প্যানিশ পত্রিকা শিরোনাম করেন,”পেলে রিটার্নস”। পরবর্তীতে গোলটি নিয়ে স্পোর্টস জায়ান্ট নাইকির বিজ্ঞাপনে ভয়েসকভার করা হলে প্রশ্ন করা হয় ঠিক এভাবে,” “Imagine you asked God to be the best player in the world, and he listened to you”
পরের মৌসুমে একাই লা লীগায় করেন ৩৭ ম্যাচে ৩৪ গোল যা ২০০৮ সালের আগ পর্যন্ত রেকর্ড ছিল। টানা ২য় বারের মত জিতেন ফিফা বর্ষসেরার পুরস্কার।
১৯৯৭ সালে বার্সেলোনার সাথে চুক্তিনামায় সমস্যা হলে রোনালদো রেকর্ড ১৯ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে ইতালিয়ান জায়ান্ট ইন্টার মিলানে যোগ দেন। এবং প্রথম ফুটবলার হিসেবে টানা দুবার ট্রান্সফার ফির ওয়ার্ল্ড রেকর্ড করেব।
৫.
ইন্টারের হয়ে সেরি’আ লীগে প্রথম সিজনেই করেন সর্বোচ্চ ৩৭ ম্যাচে ২৫ গোল। প্রথমবারের মত জিতে নিন ব্যালন ডি’অর পুরষ্কার। নেস্তা থেকে মালদিনির মত লিজেন্ডারি ডিফেন্ডাররা একবাক্যে বলেন-রোনালদো ছিল তখন অপ্রতিরোধ্য। ইন্টারের হয়ে রোনালদো গোল করেন ৯৪ ম্যাচে ৫৯ গোল। মূলত তখন থেকেই রোনালদোর নাম ইতালীয়ান পত্রিকায়-‘এল ফেনোমেনন’ পরিচিতি লাভ পায় এবং টাইমস অনলাইনে ইন্টারের সর্বকালের সেরা ২০ জন খেলোয়াড়ের একজন মনোনীত হোন। ২০০২ সালে ইন্টার ছেড়ে রোনালদো যোগ দিন রাজকীয় ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদে। প্রথম মৌসুমেই ২৩ গোল করে রিয়ালকে জিতান স্প্যানিশ লা লীগা।
৬.
রিয়ালের হয়ে ইন্টারকন্টিনেন্টাল ও স্প্যানিশ সুপার কাপও জিতেন। ২০০৩-৪ সিজনে ২৬ গোল করে হোন লীগের সর্বোচ্চ গোলদাতা এবং জিতে নিন পিচিচি ট্রফি।২য় বারের মত জিতেন ব্যালন ডি’অর।
*স্ট্যান্ডিং এভিয়েশন: ইন ওল্ড ট্রাপোর্ড
২০০৩ সালের ২৩শে এপ্রিল চ্যাম্পিয়ন্স লিগের প্রথম লেগে সান্তিয়াগো বার্না ব্যু’তে কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হয় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও রিয়াল মাদ্রিদ। সেই ম্যাচে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ৪-৩ গোলে রিয়াল মাদ্রিদকে হারিয়ে দেয়। কিন্তু দুই লেগ মিলিয়ে জয়ী হয় রিয়াল এবং টুর্নামেন্ট থেকে বাদ পরে যায় ইউনাইটেড। আর ম্যানচেস্টারের এই বাদ পড়ার পেছনের মূল হোতা ছিলেন রোনালদো। ওল্ড ট্রাফোর্ডে সেদিন রোনালদো একাই রিয়াল মাদ্রিদের হয় ৩টি গোল করেন। তাঁর অসাধারণ নৈপুণ্যে প্রতিপক্ষ সমর্থকরাও বিমুগ্ধ হয়ে পরে। তাই হ্যাট্রিক পূরণ করার পরে যখন রোনালদোকে বদলি করা হয় তখন ওল্ড ট্রাফোর্ডে ইউনাইটেড সমর্থকরা তাকে দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানায়। প্রতিপক্ষের মাঠে এরকম অভিবাদন পাওয়া ফুটবল ইতিহাসে খুবই বিরল। ম্যাচের শুরুতে রোনালদোকে খোচা মেরে ফার্গুসন বলেছিলেন, রোনালদো থেকেও ইউনাইটেডের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি রাহুল গঞ্জালেস। রোনালদোর অতিমানবীয় পারফরম্যান্স মুগ্ধ হয়ে সেই স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনই ম্যাচটি সম্পর্কে বলেন,”You can’t legislate for someone who produces moments like that.”
রিয়াল মাদ্রিদে সকল প্রতিযোগিতায় মোট ১২৭ ম্যাচ খেলে ৮৪ গোল করেন।২০০৭ সালে রোনালদো রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে এসি মিলানে পাড়ি দেন।
৭.
ক্যারিয়ারের পড়ন্তকালে শারীরিক অসুস্থতা ও ওজনের কারণে এসি মিলানের হয়ে খুব বেশি খেলতে পারে নাই। দুই মৌসুমে মিলানের জার্সি গায়ে ২০ ম্যাচে ৯ গোল করেন।২০০৮ সালে এসি মিলানে লিভোরনো ম্যাচে হাটুতে মারাত্মক আঘাত লেয়ে স্ট্রেচারে মাঠ ছাড়েন। ওই সিজনেই রোনালদোর এসি মিলান ছেড়ে নিজ দেশের ক্লাব করিয়ান্থাসে যোগ দেন। নিজ দেশের ক্লাবের হয়ে ৩১ ম্যাচে ১৮ গোল করেন। ২০০৯ মৌসুমে রোনালদো করিয়ান্থাসের হয়ে ১২ ম্যাচে ৯ গোল করেন।ক্লাবের হয়ে ক্যারিয়ারের ২য় বারের মত জিতেন কোপা ডি ব্রাজিল।
৮.
১৯৯৪ সালের ২৩শে মার্চ মাত্র ১৭ বছর বয়সেই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনার সাথে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে ব্রাজিল দলের হয়ে রোনালদোর অভিষেক হয়।৪ই মে,১৯৯৪ সালে আইসলেন্ডের সাথে রোনালদো ব্রাজিলের হয়ে প্রথম গোলের দেখা পান। সেই থেকে ব্রাজিলের জার্সি গায়ে রোনালদো গ্রেট পেলের পর সবচাইতে বেশি ৯৮ ম্যাচে ৬২টি গোল করেন।রোনালদো সবচাইতে বড় শক্তি ছিল, গুরুত্বপূর্ণ সময়ে নিজের সেরা পারফরম্যান্স করা। ৯৭’ এবং ৯৯ দুই কোপা আমেরিকাই গোল করেছেন। ১৯৯৭ কোপা আমেরিকার সেরা খেলোয়াড় ছিলেন,হয়েছিলেন ৯৯’এর কোপা আমেরিকার সর্বোচ্চ গোলদাতা।ব্রাজিলের হয়ে তিন তিনটি ইন্টারন্যাশনাল ট্রপি চ্যাম্পিয়ন সাথে ২ বারই টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়,২বার সর্বোচ্চ গোলদাতা,১বার রানার্স আপ,যে তিনটি ফাইনাল খেলেছে তার প্রতেকটিতেই গোল করেছেন জাতীয় দলের হয়ে এতটা সফল আর কেউ হতে পেরেছেন?
৯.
১৯৯৪ বিশ্বকাপের দলেয়ারোনালদোর নাম থাকে! ৯৪-এর বিশ্বকাপে দলের সঙ্গে গিয়েছিলেনও যুক্তরাষ্ট্রে। তবে কোনো ম্যাচ না খেলেই সেবার বাড়ি ফিরেছিলেন তরুণ রোনালদো।
১৯৯৮-এর ফ্রান্স বিশ্বকাপেই রোনালদো গিয়েছিলেন একজন পরিপূর্ণ ফুটবলার হিসেবে। ৪ গোল করেছিলেন, করিয়েছিলেন ৩টি। ব্রাজিলের মোট ১৪ গোলের ৫০ শতাংশেই ছিল রোনালদোর অবদান। কিন্তু ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে বিশ্ববাসী দেখেছিল এক ‘অন্য’ রোনালদোকে। রোনালদোর নিষ্প্রভ উপস্থিতি সেদিন ব্রাজিলকে বঞ্চিত করে টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপ-গৌরব থেকে। অনেকেই বলেন, ফাইনালের ঠিক আগমুহূর্তে অজ্ঞাত এক রোগে আক্রান্ত রোনালদো সেদিন ছিলেন আনফিট। কিন্তু তাঁরই প্রবল আগ্রহে কোচ মারিও জাগালো সেদিন তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন প্রথম একাদশে। তাঁর মতো খেলোয়াড়ের সেই একদিনের ব্যর্থতাও ঠাঁই পেয়েছে ফুটবল ইতিহাসের অমরত্বের অধ্যায়ে।
২০০২ বিশ্বকাপে আর কোনো ছাড় দেননি রোনালদো। পুরো আসরে কেবল ইংল্যান্ড ছাড়া ব্রাজিলের প্রতিটি ম্যাচেই গোল করেছিলেন। সেমিফাইনালে তুরস্কের বিপক্ষে তাঁর একমাত্র গোলেই ফাইনাল নিশ্চিত করে ব্রাজিল। ফাইনালেও রোনালদোর জোড়া গোলেই ব্রাজিল জিতে নেয় বিশ্বকাপে তাদের পঞ্চম শিরোপা। পুরো আসরে তাঁর আটটি গোল তাঁকে এনে দেয় গোল্ডেন বুটের সম্মান। দুই বিশ্বকাপে মোট ১২ গোল নিয়ে পেলের সঙ্গে যৌথভাবে হয়ে যান ব্রাজিলিয়ান হিসেবে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোলদাতা।
.
জার্মানিতে পরের বিশ্বকাপেও খেলেছেন। প্রথম দুই ম্যাচে ব্রাজিল জয় পেলেও কোনো গোল পাননি ‘মোস্ট কমপ্লিট স্ট্রাইকার’ রোনালদো। তাঁর কমে যাওয়া গতি আর বেড়ে যাওয়া স্বাস্থ্য নিয়ে তত দিনে শুরু হয়ে গেছে ফিসফাস। তবে নানা গুঞ্জন-সমালোচনার মধ্যেও কোচ কার্লোস আলবার্তো পেরেইরা ঠিকই আস্থা রেখেছেন রোনালদোর ওপর। এই আস্থার প্রতিদান দিতেই যেন তৃতীয় ম্যাচে জাপানের বিপক্ষে করেন দুই গোল। জার্ড মুলারের সঙ্গে যৌথভাবে হয়ে যান বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা। তিন বিশ্বকাপে গোল করা মাত্র ২০ ফুটবলারের ছোট্ট অথচ এলিট এক ক্লাবের সদস্যও বনে যান তিনি। দ্বিতীয় রাউন্ডে ঘানার বিপক্ষে ম্যাচে গোলটি তাঁকে নিয়ে যায় সেই অনন্য উচ্চতায়। জার্ড মুলারকে ছাড়িয়ে তিনি হয়ে যান বিশ্বকাপ ইতিহাসেরই সর্বোচ্চ গোলদাতা। ২০১৪ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ব্রাজিলের সাথে গোল করেই জার্মানির মিরোস্লাভ ক্লোসা ১৬ গোল করে রেকর্ডটি ভেঙ্গে দেন!রোনালদো জার্গেন ক্লিনসম্যানের পর ২য় ফুটবলার হিসেবে টানা তিন বিশ্বকাপের প্রতিটিতেই কমপক্ষে ৩টি করে গোল করার রেকর্ড করেন। পরে অবশ্য ক্লোসা টানা তিন বিশ্বকাপে ৪ গোল করে এই রেকর্ডটিও ভেঙ্গে দেন। রোনালদো ৪ বিশ্বকাপ খেলে ১৯ ম্যাচে ০.৭৯ গড়ে ১৫টি গোল করেন।
.
২০১১ সালের ৭ই জুন, ব্রাজিলের সাও পাওলোতে রোমানিয়ার সাথে এক আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ খেলে রোনালদো ব্রাজিলের তার বর্নাট্য ক্যারিয়ারের সমাপ্তি ঘটান। বর্তমানে রোনালদো লা লীগার রিয়াল ভ্যালদোলিদের হয়ে কাজ করতেছেন। ২০১৮ সালে ৩০ মিলিয়নের বিনিময়ে রোনালদো ক্লাবটির ৫১ শতাংশ মালিকানা কিনে নেন।
.
১৯৯৮ থেকে ২০০২ একাই বিশ্বের মানুষকে ফুটবল অনুরাগী করতে তার অবদানের কথা প্রথমেই আসবে।ফুটবল বিশ্বে রোনালদোর মত খুব কম খতরনাক স্ট্রাইকার জন্ম নিয়েছে-যারা প্রতিপক্ষের প্রতি ইঞ্চি জায়গা ব্যবহার করে মুহূর্তের মধ্যে ম্যাচের ফলাফল পালটে দিয়েছে,দুর্দান্ত সব ফিনিশিংয়ে একের পর এক গোল করেছে। সত্যিকথা বলতে,রোনালদো ছিলেন এমন এক ভয়ংকর স্ট্রাইকার যার নাম শুনলেই বিশ্বের কোটি কোটি ৯০’এর দশকে জন্ম নেওয়া ফুটবল অনুরাগীদের রক্তে নাচন ধরে।
তাই সর্বকালের সেরা নাম্বার নাইনের তালিকায় তিনিই সেরা।🙂
The Journey Begins
Thanks for joining me!
Good company in a journey makes the way seem shorter. — Izaak Walton
